
অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম:
কোটা সংস্কার আন্দোলন-২০২৪ বাংলাদেশের আপামর ছাত্র জনতার বিজয় হয়েছে। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর নেতৃত্ব অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থান মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের মাধ্যমে রক্ষস্নাত বাংলাদেশে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। এ আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধসহ সকল শহীদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও হাজার হাজার আহত শিক্ষার্থীর শেফা কামনা করছি। ইতোমধ্যে অনেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমাদের অবস্থান নিয়ে নানান ধরণের কুৎসা রটনা করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিজয়কে তাদের দলীয় অর্জন দাবি করতে অপচেষ্টা করতেছে। তাই আজকের এ লেখার অবতারণা। প্রথমে ছাত্র-জনতার বিজয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার পক্ষ হতে সর্বস্তরের ছাত্রজনতাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।


♦
প্রসঙ্গতঃ ছাত্র আন্দোলনের সূচনা থেকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা রাজপথে ছিল। মূলতঃ দল-মত নির্বিশেষে সংঘটিত এ আন্দোলন মূলত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। সবাই ছাত্রদের ব্যানারে এ আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনে। কিন্তু, ২/১টি দল এটি তাদের আন্দোলন বা অর্জন দাবি করার প্রেক্ষিতে আমাদের দলীয় অবস্থান কী ছিল, তা জানানোর জন্য আমার এ লেখার অবতারণা।
১। হাইকোর্টে কোটা বাতিলের রাযের প্রতিক্রিয়ায় ৫/৭/২০২৪ইংরেজি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা (অফিসিয়াল পেইজ দেখুন)আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়-কোটা ব্যবস্থা পূনর্বহাল মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাথে প্রহসন। জেলা সমমান এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় পরিষদের পক্ষ থেকে আহ্বান রইল।
২। ছাত্রদের উপর স্বৈরাচারী সরকারের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ কর্তৃক নিপীড়ন শুরু হলে বিগত ১৬/৭/২০২৪ ইংরেজি ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি আজাদ হোসাইন অফিসিয়াল ছাত্র আন্দোলনে যুগপৎ ৪টি কর্মসূচি ঘোষণা করে রাজপথে অবস্থান নেন।
৩। বিগত ১৭/৭/২০২৪ ইংরেজি ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। বিশেষত- ছাত্রসেনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ঢাকা মহানগর, ছাত্রসেনা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের মুরাদপুরে ছাত্রসেনা জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার শিক্ষার্থীরা ও ছাত্রসেনা পাঁচলাইশ থানা, নারায়ণগঞ্জ জেলা, সিলেট জালালাবাদ শাখার কর্মীরা ছাত্রলীগের ও পুলিশের সন্ত্রাসী হামলায় আহত হয়। এখনও আহত অনেক কর্মী বিভিন্ন মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। আল্লাহপাক সবাইকে শেফা দান করুন আমিন।
.
৪। বিগত ১৮/৭/২৪ ইংরেজি বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের দপ্তর সচিব স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় ও আহতদের সুস্থতা কামনায় ১৯/৭/২৪ ইংরেজি শুক্রবার বাদে জুমা মিলাদ ও দোয়া কর্মসূচি ঘোষণা করে মসজিদের ইমাম-খতিবদের প্রতি আহ্বান জানান।
.
৫। কোটা সংস্কার আন্দোলনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করায় চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানা, রাউজান থানা, কুমিল্লা সদর থানা, কোতোয়ালী থানা, সিলেট জালালাবাদ থানা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানার ফ্যাসিস্ট খুনী সরকারের পেটুয়া বাহিনী পুলিশ কর্তৃক দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় ছাত্রসেনা নেতা শহীদুল ইসলাম রেজা, আসাদুজ্জামান মেরাজ, হাসান রেজা, ফরহাদ কাউসারসহ অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় অনেকের সংবাত তাৎক্ষণিক পাওয়া যায় নি। ইতোমধ্যে ৬ ও ৭ আগস্ট অনেকে আদালত থেকে জামিন হয়েছে।
.
৫। মহামান্য হাইকোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পর ২২ জুলাই ২০২৪ ইংরেজি বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব বিবৃতিতে “শিক্ষার্থীদের রক্তের প্রতিদান উল্লেখ করে নিষ্ঠুরতা, হত্যাকাণ্ড ও গণগ্রেপ্তার বন্ধের আহ্বান জানান।
.
৬। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ৩ আগস্ট ২৪ ইংরেজি জরুরী প্রেসিডিয়াম বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় পরিষদের পক্ষ থেকে ৪ আগস্ট ২৪ ইংরেজি সংবাদ সম্মেলন করেন।
.
৭। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা ছাত্রসংগঠন হিসাবে শিক্ষার্থীদের সাথে সরাসরি সূচনা থেকে রাজপথে থাকলেও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ কোটা আন্দোলনের শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানান। আমি বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহকারী দপ্তর সচিব ১৫ জুলাই ২৪ ইংরেজি স্ট্যাটাস দিই- “ছাত্র আন্দোলনে ঘি ঢাললেন!দেশের সবাই যখন রাজাকার! তখন আপনি জয় বাংলা হতে দেরি নাই…”।
আরেকটি স্ট্যাটাসে লিখি- “কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ’র সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলা তীব্র নিন্দনীয়। রাষ্ট্র কী রক্তক্ষয়ী সমাধান চায়??”
আমি ১৬ জুলাই ২৪ ইংরেজি শিক্ষার্থী হত্যা প্রসঙ্গে লিখি- “সারাদেশে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে… চট্টগ্রাম, ঢাকা ও রংপুরে ৫ জন নিহত।”
আমি ১৭ জুলাই ২৪ ইংরেজি লিখি- স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ায় কারবালার শিক্ষা। হোসাইনীরা মাথানত করে না।
আমি ১৮ জুলাই ২৪ ইংরেজি লিখি-
মোবাইলের নেট বন্ধ রেখে কী আন্দোলন দমন করতে পারবেন?
এভাবে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে এসেছি। এখন অনেকে ছাত্রদের আন্দোলনের ক্রেডিট নিতে গিয়ে অন্যান্য ব্যক্তি-সংগঠনের অবদানকে অস্বীকার করছে।
মনে রাখবেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী এ একটি আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষ দল-মত নির্বিশেষে সমর্থন জানিয়েছে ও অংশ নিয়েছে। যেখানে বাম-ডান, হিন্দু-মুসলিম, শ্রেণি-পেশার কোন বিভাজন ছিল না। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ছিল। তাই স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট হাসিনা হাজার মানুষের রক্তপাত করেও ক্ষমতাচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছে।
.
বর্তমানে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সুযোগসন্ধানী, স্বার্থন্বেষী মহল ইসলামী নামধারী উগ্রবাদিরা সারাদেশে রাষ্ট্রিয় সম্পদ ও জনগণের ব্যক্তিগত সম্পদ লুট ও অগ্নিসংযোগ করতেছে। সংখ্যালঘুদের মন্দিরে, বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করতেছে। এ দেশে ইসলাম প্রচারকারী আল্লাহর অলিদের মাজার শরীফে হামলা-ভাংচুর করতেছে, সুন্নী ইমাম-খতিবদের মসজিদে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এই সন্ত্রাসীদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা না হলে জনগণের বিজয় ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে।
আশার কথা- দেশের অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের ন্যায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার কর্মীরা এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের সাথে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, রাজপথে পরিচ্ছন্নতা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করতেছে। একই সাথে আধ্যাত্মিক ও মানবিক সংগঠন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশও দেশজুড়ে ভূমিকা রাখতেছে।
মোদ্দাকথা- এখন দল-মত নির্বিশেষে সবাই হাতে হাত রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।
লেখক-
অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম,
সহকারী দপ্তর সচিব,
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট।
ও সাবেক সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক,
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা।
(বি.দ্র- অবিকৃতরূপে শেয়ার করতে আপত্তি নাই)
#QuotaReformMovement #chattrasenacentral #iSupportSena #SaveBangladeshiStudents #২০২৪কোটা_আন্দোলন #bifcentral #কোটা_আন্দোলন #হীরক_রাজার_পতন
#QuotaReformProtest #quotamovement